শিশুর খাবার কেমন হওয়া উচিত

শিশুর খাবার কেমন হবে
শিশুর জন্মের পরে প্রথম দিন থেকে শুরু করে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট কেননা সময় মায়ের বুকের দুধের মধ্যেই শিশু তার পুষ্টির সব উপাদান পায় বুকের দুধের মাধ্যমেই শিশুর পুষ্টির চাহিদা মিটে থাকে, যা তার শারীরিক এবং মানসিক বর্ধন বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একেএক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিংবলে ছয় মাসের পর থেকে শিশু মায়ের দুধের পাশাপাশি তার পুষ্টির চাহিদা মেটাতে খাবারের আরেকটা ধাপে উন্নীত হয় সময় শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেয়া শুরু করা যেতে পারে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্য বাড়তি খাবার ধীরে ধীরে শুরু করতে হবে
শিশুকে বাড়তি খাবার খাওয়ানো শুরু করার জন্য বেশকিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় যেমন- শিশুর বাড়তি খাবার অবশ্যই ঘরে তৈরি হতে হবে বাইরের কোনো খাবার শিশুকে দেয়া যাবে না বাড়তি খাবারের মধ্যে প্রথমেই চালের গুঁড়ার সুজি দেয়া যেতে পারে যদি শিশু তা হজম করতে পারে তবে ধীরে ধীরে সুজি থেকে খিচুড়ি খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে খিচুড়ি প্রথমে চাল, ডাল তেল দিয়ে তৈরি করতে হবে এতে কোনো অসুবিধা না হলে ধীরে ধীরে তাতে সবজি মেশানো যেতে পারে এক বছরের কম বয়সের শিশুকে গাজর, আলু, পেঁপে ইত্যাদি নরম সবজি দেয়া যেতে পারে খিচুড়িতে অভ্যস্ত শিশুকে ধীরে ধীরে মাছ, নরম মাংস খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে এক বছর পরে শিশুকে অন্যান্য সবজিতে অভ্যস্ত করা যেতে পারে এছাড়াও - মাসের ছোট মুরগি খাওয়ানো যেতে পারে

কোনো কারণে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে খিচুড়িতে পেঁপে বন্ধ করে অন্য সবজি দিতে হবে কারণ পেঁপে পায়খানা নরম করে পাতলা পায়খানা হলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে এছাড়া নরম পায়খানা শক্ত করতে হলে বেশি বেশি সবজি খাওয়াতে হবে আবার পায়খানা ঠিক হলে শিশুর চাহিদা অনুযায়ী সবজি দেয়া যেতে পারে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে পেঁপে অনেক উপকারী মনে রাখতে হবে, কোষ্ঠকাঠিন্য হলে বাড়তি খাবারের পাশাপাশি অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে বেশি করে মধু পুদিনা পাতার সঙ্গে -১০ ফোঁটা অলিভ অয়েল খাওয়াতে হবে এছাড়াও স্যুপ, জুস পানি শিশুদের জন্য নিরাপদ শিশুদের জন্য প্রোটিন অনেক বেশি দরকার তাদের শারীরিক বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য সাধারণত নরম কাঁটা ছাড়া মাছ, মুরগির মাংস, মুরগির স্যুপ, ডালের পানি ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে ডিম প্রোটিনের অনেক বড় উৎস তবে ১০ মাসের আগে শিশুকে ডিম খাওয়ানো যাবে না ১০ মাস পরে ডিমের কুসুম দিয়ে শুরু করা যেতে পারে কিন্তু সব শিশু ডিম সহ্য করতে পারে না সেক্ষেত্রে ডিম খাওয়ানো বন্ধ করে দিতে হবে গরমের দিনে ডিম গুরুপাক খাবার হয়ে থাকে এজন্য যেসব শিশু ডিম সহ্য করতে পারে, তাদের ক্ষেত্রেও গরমের সময় - দিন পর পর অনেক সাবধানতার সঙ্গে ডিম খাওয়াতে হবে

লক্ষ্য রাখতে হবে শিশুর তৈরি খাবারে যেন বাড়তি চিনি দেয়া না হয় বাড়তি চিনি শিশুর শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর অতিরিক্ত চিনি এবং লবণ কিডনির জন্য অনেক ক্ষতিকর বাড়তি চিনি শিশুদের ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের অন্যতম প্রধান কারণ ঝাল, মসলা তেলের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে শিশুর খাবারের ক্ষেত্রে সময়ের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাধারণত তিন-চার ঘণ্টার ব্যবধানে শিশুকে খাবার খেতে দিতে হবে খাবারের পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে শিশুদের পাকস্থলী অনেক ছোট থাকে সাধারণত প্রতিটি খাবারের পরিমাণ ১০০-১২০ মিলিগ্রামের মধ্যে রাখলে ভালো হয় তা না হলে শিশুদের গ্যাস এবং বদহজম হওয়ার আশঙ্কা থাকে অবশ্য এই বিষয়টি শিশুর বর্তমান ওজন শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে

শিশুদের জন্য ফল অনেক বেশি উপকারী সাধারণত পাকা কলা, পাকা আম, আপেলের পিউরি, নাশপাতির পিউরি, কমলার রস ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে মনে রাখতে হবে, একসঙ্গে সব ধরনের ফল বা খাবার কখনই শিশুকে খাওয়ানো যাবে না এক্ষেত্রে একটি ফল বা একটি খাবারে অভ্যস্ত করে আরেকটি ফল বা অন্য খাবার শুরু করা ভালো খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাটি-চামচ ব্যবহার করতে হবে কোনোভাবেই ফিডার ব্যবহার করা যাবে না শিশুকে জোর করে খাওয়ানো যাবে না নিজের ইচ্ছায় যতটুকু খাবে ততটুকু খেলেই ভালো

বাড়তি খাবারের পাশাপাশি পরিমিত পানি দিতে হবে শিশুর খাবারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে পচা, বাসি খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে সর্বোপরি পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিয়মিত খাওয়ানোর অভ্যাস গড়তে হবে এতেই শিশু সুস্থ স্বাস্থ্যবান হবে
সুত্রঃ দৈনিক যুগান্তর, লেখক : শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল
 উত্তরা, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.