বাসকের ঔষধী গুণ

বাসক:
পরিচিতি
বাসক একটি ভারত উপমহাদেশীয় ভেষজ উদ্ভিদ আর্দ্র, সমতলভূমিতে এটি বেশী জন্মে লোকালয়ের কাছেই জন্মে বেশী হালকা হলুদে রংয়ের ডালপালায়ক্ত থেকে মি. উঁচু গাছ, ঋতুভেদে সর্ব্বদাই প্রায় সবুজ থাকে বল্লমাকারের পাতা বেশ বড় ফুল ঘন, ছোট স্পাইকের ওপর ফোটে স্পাইকের বৃন্ত পাতার চেয়ে ছোট স্পাইকের ওপর পাতার আকারে উপপত্র থাকে যার গায়ে ঘন এবং মোটা শিরা থাকে ফুলের দল (কোরোল্লা বা পত্রমূলাবর্ত) সাদা বর্ণ তার ওপর বেগুনী দাগ থাকে ফল সুপারি আকৃতির; বীজে ভর্তি
বাসকের ঔষধী গুণ:
তাজা অথবা শুকানো পাতা ওষুধের কাজে লাগে বাসকের পাতায়ভাসিসিননামীর ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা রে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি হয়, অন্তত: বমির ভাব বা নসিয়া হয়, অস্বস্তি হয় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় বাসকের ভেষজ গুণাবলি প্রমাণিত হয়েছে
এর মূল, পাতা, ফুল, ছাল সবই ব্যবহার হয়
প্রয়োগ:
. বাসক পাতার রস - চামচ হাফ থেকে এক চামচ মধুসহ খেলে শিশুর সর্দি কাশি উপকার পাওয়া যায়
. বাসক পাতার রস স্নানের আধ ঘন্টা আগে মাথায় কয়েকদিন মাখলে উকুন মরে যায় আমবাত ব্রণশোথে (ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থা) বাসক পাতা বেটে প্রলেপ দিলে ফোলা ব্যথা কমে যায়
. যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্যে শ্বাসকষ্ট হলে বা কাশি হলে বাসক পাতার রস - চামচ এবং কন্টিকারীরস - চামচ, চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে
. প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রনা থাকলে বাসকের ফুল বেটে - চামচ মিছরি - চামচ সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়
. জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল -১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলি লিটার জলে ফোটাতে হবে
. ২৫ মিলি লিটার থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে দিনে বার করে খেলে জ্বর এবং কাশি দুইই চলে যায়
. বাসকের কচিপাতা ১০-১২ টি এক টুকরো হলুদ একসঙ্গে বেটে দাদ বা চুলকানিতে লাগলে কয়েকদিনের মধ্যে তা সেরে যায়
. বাসকপাতা বা ফুলের রস - চামচ মধু বা চিনি ১চামচসহ প্রতিদিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়
. পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে বাসক পাতা ২০ টি থেঁতো করে কাপ জলে সিদ্ধ করে কাপ থাকতে নামিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় কুলকুচি করলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়
ভেষজ দাওয়াই:
* শিশুর পেটে কৃমি থাকলে বাসকের ছালের ক্বাথ খাওয়ালে এর উগ্র তিক্ত স্বাদ কৃমি বের হয়ে যায়
* যাদের হাঁপানির টান আছে তারা বাসক পাতা শুকনো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরুটের মতো পাকিয়ে এর সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়
* যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তারা বাসক পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে
*বাসকপাতার রস শঙ্খচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে রং ফরসা হবে
* এক কলসি পানিতে তিন-চারটি বাসকপাতা ফেলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায় এরপর ব্যবহার করতে পারেন
* পাতার রস নিয়মিত খেলে খিঁচুনি রোগ দূর হয়ে যায়
* বাসক পাতার রস মাথায় লাগালের উকুন চলে যায়
* বাসক পাতা বা ফুলের রস এক বা দুই চামচ মধু বা চিনি দিয়ে খেলে জন্ডিস ভালো হয়
* শরীরে দাদ থাকলে বাসক পাতার রস লাগালে ভালো হয়ে যায়
অন্যান্য উপকারিতা:
বাসকের পাতা সবুজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পাতা থেকে হলদে রং পাওয়া যায় বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে যায় ফলে ছত্রাক জন্মায় না এবং পোকামাকড় ধরে না বলে ফল প্যাকিং এবং সংরক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হয় পাতায় কিছু দুর্গন্ধ আছে বলে পগুরা মুখ দেয় না সেই কারণে চাষ আবাদের জন্য জমি উদ্ধারের কাজে বাসকের পাতা বিশেষ উপকারী

No comments

Powered by Blogger.