বহেড়ার ঔষধি গুনাগুন
বহেড়া:
বহেড়া ফল উপমহাদেশের প্রাচীনতম আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিশেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কথিত আছে, প্রতিদিন বহেড়া ফল ভিজানো এক কাপ পানি খেলে দীর্ঘজীবী হওয়া যায়। বহেড়া বিশেষ ভাবে পরিশোধিত হয়ে এর ফল, বীজ ও বাকল মানুষের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। আসুন, জেনে নেয়া যাক বহেড়া ফলের ঔষধি গুন গুলো-
বহেড়া এক ধরনের ঔষধি ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম
“Terminalia belerica”। এই ফলের আরেক নাম বিভিতকি, তবে বহেড়া নামেই বেশি পরিচিত। এই গাছের জন্ম ভারতবর্ষে। কথিত আছে,হিন্দু ধর্মের দেবরাজ ইন্দ্র অমৃতের সন্ধানে যখন সমুদ্র মত্থন করেছিলেন,সেই সময় এক ফোঁটা অমৃত পৃথিবীতে পড়ে যায়। আর সেই অমৃতের ফোঁটা হতেই বহেড়া গাছের জন্ম।
বাংলাদেশের বনাঞ্চল ও গ্রামে এই গাছের দেখা মেলে। বহেড়া গাছ ১৫-২৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর বাকল ধূসর ছাই রঙের। পাতা কাঁঠাল পাতার মতো মোটা, লম্বায় প্রায় ৫ ইঞ্চি। এর ফুল ডিম্বাকৃতির প্রায় ১ ইঞ্চির মতো লম্বা। কাঁচা পাকা বহেড়া ফলের রঙ সবুজ থাকে। পেকে গেলে লাল যার। পর শুকিয়ে ক্রমশ বাদামী। ফলের বাইরের আবরন মসৃণ ও শক্ত এবং ভেতরে একটি মাত্র শক্ত বীজ থাকে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ভেতর এর ফল পেকে যায়।
শ্বেতী রোগ-
বহেড়ার বিচির শাঁসের তেল বের করে নিয়মিত শ্বেতীর উপর লাগালে অল্প দিনেই গায়ের রঙ স্বাভাবিক হবে।
আমাশয়-
রক্ত আমাশয় হলে প্রতিদিন পানির সাথে বহেড়া ফলের চূর্ণ মিশিয়ে পান করলে আমাশয় ভালো হয়ে যাবে।
অকালে চুল পাকা-
অনেকেই আছে যাদের অকালে চুল পেকে যায়। বহেড়া ফলের বিচি বাদ দিয়ে শুধু খোসা নিয়ে পানি দিয়ে ভালো ভাবে মসৃণ করে বাটুন ,এবার বাটা মিশ্রণটি এক কাপ পানিতে গুলে সেই পানি ছেঁকে নিন।এবার সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে উপকার পাওয়া যাবে।
কফ-
আধা চা চামচ বহেড়া চূর্ণ ও ঘি একসাথে গরম করে তার সাথে মধু মিশিয়ে চেটে খেলে কফের সমস্যা কমে যায়।
অকালে টাক পড়া-
যাদের মাথায় অকালে টাক পড়েছে তারা বহেড়ার বিচির শাঁস অল্প পানিতে মিহি করে বেটে টাকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
ফুলো কমানোর জন্য-
শরীরেরে কোন স্থানে ফুলে গেলে বহেড়ার ছাল বেটে একটু গরম করে নিয়ে ফুলো জায়গায় প্রলেপ দিলে ফুলো কমে যাবে ।
বিভিন্ন রোগে প্রয়োগ:
* ইন্দ্রিয়-দৌর্বল্যেঃ এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে রোজ দু’টি করে বহেড়া বিচীর শাঁস খান।
* শ্বেতী রোগেঃ বহেড়া বিচির শাঁসের তেল বের করে শ্বেতীর ওপর লাগালে গায়ের রং অল্পদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে।
অকালে টাক পড়লেঃ বহেড়া বিচির শাঁস অল্প পানিতে মিহি করে বেটে চন্দনের মতো টাকে লাগালে, টাক সেরে যায়।
* শ্লেস্মায়ঃ আধা চা-চামচ বগেড়া চূর্ণ, ঘি গরম করে তার সাথে মিশিয়ে আবার গরম করে মধু মিশিয়ে চেটে খেলে উপরকার পাওয়া যায়।
* আমাশয়ঃ সাদা বা রক্ত যে কোনও আমাশয়ে প্রতিদিন সকালে পানির সাথে বহেড়া চূর্ণ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
অকালে চুল পাকলেঃ বহেড়ার বিচি বাদ দিয়ে ১০ গ্রাম ছাল নিয়ে পানি দিয়ে বাটুন। এক কাপ পানিতে গুলে পানিতে ছেঁকে নিন, এবার সে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
* ফুলো কমানোর জন্যঃ বহেড়ার বিচি বাদ দিয়ে ছাল বেটে একটু গরম করে ফুলোয় প্রলেপ দিলে ফুলো কমে যাবে।
ভেষজ দাওয়াই
ব্যবহার:
বহেড়া বিশেষভাবে পরিশোধিত করে এর ফল, বীজ এবং বাকল ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসায়। বহেড়ার কাঠ হরিদ্রাভ ও শক্ত। এ কাঠ সহজে পানিতে পচে না। এটি নৌকা তৈরিতে ব্যবহার হয়। ফল থেকে লেখার কালি বানানো হয়। বীজ থেকে বিশেষভাবে অঙ্কুরোদ্গম করা হয়।
ঔষধি গুণ:
কথিত আছে, প্রতিদিন বহেড়া ভেজানো পানি এক কাপ পরিমাণ পান করলে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়। বহেড়া হৃৎপিণ্ড এবং যকৃৎ রোগের আক্রমণ কমায়। সর্দি-কাশি নিরাময় করে। এটা কৃমিনাশক, স্বরনাশক এবং অনিদ্রা দূর করে। এ ছাড়া পাইলস, হাঁপানি ও কুষ্ঠরোগে বহেড়ার চিকিৎসা বেশ ফলপ্রসূ।
No comments