মেথির ১৭ টি আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য গুনাগুন
রান্নায় ব্যবহার হলেও ভেষজ ওষুধ হিসেবেও ‘মেথি’ চমৎকার। মেথির নানা গুণ নিয়ে লিখেছেন ডায়েট প্লানেট অ্যান্ড নিউট্রিশন
কনসালট্যান্সির পুষ্টিবিদ রাজিয়া হক
মেথিতে
রয়েছে—প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম,
ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, আয়রন, কপার, ভিটামিন ‘সি’, নিয়াসিন ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও এতে রয়েছে
ডায়োজেনিন এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হরমোন। মেথির নানা গুণ হলো
ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে রাখে : মেথিকে
বলা হয় ডায়াবেটিসের মহৌষধ। রক্তে যাঁদের সুগার বা চিনির মাত্রা অনেক বেশি, তাঁরা
মেথি খেলে উপকার পাবেন। স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতাও তুলনামূলকভাবে কমায়।
যৌনশক্তি
বাড়ায় : দিনে দুবার
মেথির রস পরিমাণমতো সেবন করলে যৌনশক্তি হ্রাসজনিত সমস্যায় উপকার মেলে।
চর্বি
কমায়/রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : রক্তে
কোলেস্টেরল কমাতে বা রক্তে চর্বির পরিমাণ কমাতে দারুণভাবে কার্যকর বলে উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
গলা
ব্যথা কমায় : লেবু ও মধুর
সঙ্গে মেথিদানার গুঁড়া মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা উপশম করে।
চুল
পড়া : স্বাস্থ্যহীন চুলের
সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে মেথি বেশ কার্যকরী। বেটে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে মাথায়
লাগালে চুল পড়া কমে। নারিকেল তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে সেই তেল ব্যবহার করলে চুলের
গোড়া শক্ত ও মজবুত হয়, চুল পড়া কমে, খুশকিও দূর করে।
হরমোনাল
সমস্যা : মেথিতে থাকা ‘সাপোনিস’ বা
‘ডাইওসজেনিন’ নামের যৌগ পদার্থ হরমোনের স্তর বা এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে
সহায়তা করে।
হজমে
সহায়ক : প্রতিদিন খালি
পেটে সকালে মেথি খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি ঘটে। অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ও ফাইবারে ভরা মেথি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে। মেথি ভেজানো পানির পাশাপাশি রান্নাতেও মেথি দিন। পেটের সমস্যা দূর হবে।
জ্বর
: লেবুর রস ও মধুর সঙ্গে মেথি
খেলে ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যায়, গলার খুসখুসে ভাব কমে যায়।
ওজন
কমায় : যাঁরা বেশি ওজন
নিয়ে ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি বেশ উপকারী।
কোলেস্টেরল কমায়- নিয়মিত মেথি খেলে শরীরে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। মেথির প্রভাবে ক্ষুদ্রান্ত্র কোলেস্টেরল গ্রহণ করে না। ফলে দেহে এলডিএল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা লাগামছাড়া হতে পারে না। গ্যালাক্টোম্যানান ছাড়াও মেথিতে আছে প্রচুর পটাসিয়াম। ফলে মেথি খেলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে। যার ফলে কমে হৃদরোগের ঝুঁকিও।
রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : মেথি
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরকে রাখে সতেজ। রক্তের উপাদানগুলোকে
করে উদ্দীপ্ত। ফলে মানুষের কর্মোদ্দীপনাও বৃদ্ধি পায়।
কৃমি
প্রতিরোধ : সকালে খালি
পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে কৃমি দূর হয়।
মাতৃদুগ্ধ
বাড়ায় : মাতৃদুগ্ধ
বৃদ্ধির জন্য কালিজিরার মতো মেথি পিষে খাওয়া বেশ উপকারী।
ত্বকের
সমস্যায় : গরমজনিত ত্বকের
অসুখে অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে ত্বকে ঘা, ফোঁড়া, ইরিটেশন দূরীকরণ, বয়সের ছাপ পড়া
থেকে রক্ষা ইত্যাদিতে মেথির জুড়ি নেই। প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে মেথিগাছের নির্যাস
ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ, কালো দাগ ও ফুসকুড়ি নিরাময় হয়।
ওজন হ্রাস- শরীরের ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই মেথি রাখুন ডায়েটে। দুই গ্লাস পরিমাণ পানিতে রাতভর ভিজিয়ে রাখুন এক চা চামচ মেথিদানা। সকালে খালি পেটে ছেঁকে নিয়ে ওই পানি পান করুন। মেদ এবং ওজন কমাতে এর জুড়ি নেই।
ঋতুস্রাবের কষ্ট হ্রাস করে- ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের ভেজানো মেথিদানা
চিবিয়ে খেতে বলা হয়। মেথিতে থাকা যৌগ এই সময়কার পেটের
যন্ত্রণায় উপশম দিতে
খুবই কার্যকর।
কিডনি ভাল রাখে- মেথিদানার প্রভাবে কিডনি ভাল ভাবে কাজ করে। কিডনির কোষও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় মেথি খাওয়ায়।
ব্যবহারপদ্ধতি
♦ প্রতিদিন সকালে বা বিকালে এক চামচ মেথি গুঁড়া
পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সম্ভব হলে খালি পেটে বা ভরা পেটে চিবিয়েও
খাওয়া যায়।
♦ সারা রাত মেথি ভিজিয়ে সকালে পানি খেলেও উপকার
মেলে।
♦ মেথির পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়, যা
গ্রামবাংলার মানুষের প্রিয় খাদ্য।
সাবধানতা
♦ মেথি প্রয়োজনে রোদে শুকিয়ে নেওয়া যাবে, কিন্তু
আগুনে ভেজে খাওয়া ঠিক হবে না, এতে খাদ্যগুণ নষ্ট হয়।
♦ ছয় সপ্তাহে অন্তত দিনে দুবার করে মেথি নিয়মিত
খেলে উপকার মেলে। টানা ছয় মাস খেলে আরো ভালো।
♦ গর্ভাবস্থায় না খাওয়া ভালো।

No comments