ত্বকের যত্নে ফেসিয়াল মাস্ক
ওজন হারানো, গর্ভাবস্থা বা বয়সজনিত কারণে মুখের চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে তা ঝুলে পড়তে পারে। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে দেখা যায় বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণেই ত্বক ঝুলে পড়ছে। ত্বকের ইলাস্টিসিটি লস হওয়া প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। এটি এজিংয়ের সাইন। একে ইলাসটোসিস
বলা হয়। এর থেকে স্থায়ীভাবে পরিত্রাণের উপায় নেই। কিছু উপায় আছে দেখে নিতে পারেন।
স্ট্রেস
অনেক বেশি স্ট্রেসের কারণে হরমোনাল ইমব্যালেন্স দেখা দেয়, যার প্রভাব ত্বক ও শরীরের ওপর পড়ে। হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে প্রোটিন রিডাকশন হতে থাকে, আর এটিই ত্বকের ইলাস্টিসিটির জন্য দায়ী।
রেডিয়েশন
এই ক্ষতিকারক রেডিয়েশন ত্বকের অনেক সমস্যার জন্য দায়ী। যেমন ট্যানিং, রিঙ্কেল, ইলাস্টিসিটি লুজ।
ডায়েট
অনেক বেশি চিনি খেলে মুখের ত্বক ঝুলে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর খাবার ত্বকের অনেক অসুস্থতার কারণ। তার মধ্যে ইলাস্টিসিটি হারানো একটি।
অনেকেই পার্লারে স্কিন টাইটেনিং ফেসিয়ালের নাম শুনেছেন, কিন্তু হয় তো বুঝে পান না কী এমন জাদু দিয়ে তারা আপনার ঝুলে পড়া ত্বককে টানটান করে তুলছে। চলুন, তাহলে দেখে আসি সেই জাদুর ছোঁয়া লাগানো মাস্ক সম্পর্কে।
জেলাটিন মাস্ক:
এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী। এক প্যাকেট জেলাটিনের সঙ্গে ৩ চামচ কমলার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলায় জ্বাল দিন জেলাটিন গলে যাওয়া পর্যন্ত। একটু ঠাণ্ডা হতে দিন মিশ্রণটিকে তারপর মুখে অ্যাপ্লাই করুন। জেলাটিন ত্বককে যেমন নরম করে তেমনি শুকিয়ে যাওয়ার পর টানটানে ভাব বজায় রাখে।
বাঁধাকপি ও চালের গুঁড়ার মাস্ক:
২ থেকে ৩টি বাঁধাকপির পাতা ভালো করে বেটে নিন, এর সঙ্গে ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া ও কয়েক ফোঁটা বাদাম/অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর মুখে, গলায় লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। যদি আপনার অয়েলি ত্বক হয়ে থাকে তবে তেলের বদলে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন।
অরেঞ্জ মাস্ক:
আপনার যদি তৈলাক্ত অথবা কম্বিনেশন ত্বক হয়ে থাকে তবে আপনি ক্লিনজিংয়ের পর এই মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন। ১ চামচ কমলার খোসা চূর্ণের সঙ্গে ১ চামচ বেসন, এক চিমটি হলুদ, এক চামচ গুঁড়া দুধ, এক চামচ গোলাপ জল সব এক সঙ্গে মিশিয়ে স্মুত পেস্ট তৈরি করুন। তারপর এটি মুখে গলায় লাগিয়ে রাখুন ২০ থেকে ৩০ মিনিট। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি আপনার ত্বককে টাইট করবে, ফেস হোয়াইটিংয়ের কাজও করবে।
এগ মাস্ক:
একটি ডিমের কুসুম ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এর সঙ্গে দুই টেবিল চামচ ওট মিল, এক চা চামচ বাদামের তেল, এক চা চামচ কমলার রস মিশান। পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি হলো ন্যাচারাল উপায়ে ত্বক টানটান রাখার আরেকটি রেমিডি।
দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন:
ভিটামিন ই ও সি যুক্ত খাবার বেশি করে খাবেন। এগুলো ত্বক টাইটেনিংয়ের জন্য উপকারী। যেমন কমলা, মিষ্টি আলু, গাজর, জাম্বুরা ইত্যাদি। বাইরে যাবার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাবেন।
প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন। পানি ত্বকের সেলে আর্দ্রতা যোগায় আর ইলাস্টিসিটি ইমপ্রুভ করে।প্রোটিন গ্রহণ করবেন নিয়মিত। এটি আমাদের ত্বকের কোলাজেন আর টাইটেনিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় মাছ ও বাদাম রাখুন।
প্রতিদিন ৩০ মিনিটের ব্যায়াম আপনার ত্বকের ঝুলে যাওয়া রোধ করে আর এটি তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে ব্যায়াম আমাদের শরীরের সব organ এর সুস্থতার জন্য উপকারী। খুব প্রয়োজন না হলে গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন না। কেননা গরম পানি চামড়া শুষ্ক করে দেয়।
প্রমাণিত হয়েছে যে, পালং শাক, ডিমের কুসুম, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার ত্বকের ইলাস্টিসিটির সমস্যা ২০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। মাছের তেল যুক্ত ক্যাপসুল যদি প্রতিদিন গ্রহণ করা যায় তবে আপনার হার্ট তো ভালো থাকবেই সেই সঙ্গে টানটানে ত্বক রক্ষার জন্য অনেক উপকারী হবে।
সব শেষে কথা দিয়ে গেলাম, যদি বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে ত্বকের টানটান ভাব হারিয়ে ফেলেন তাহলে উপরের ফেসিয়ালটি করে দেখুন অবশ্যই উপকার পাবেন। এর সঙ্গে আমি আরেকটি কথা যোগ করতে চাইব যে, যদি অতিরিক্ত ওজন কমার কারণে বা বয়সজনিত সমস্যা ছাড়া অন্য কোনো কারণে ত্বক ঝুলে পড়ে তবে চেষ্টা করুন ফেসিয়াল নয় বরং ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে।
No comments