টিনএজারদের ব্রণ সমস্যার সমাধান
ত্বকের সৌন্দর্যহানির জন্য ব্রণ দায়ী। ব্রণ বা একনে শতকরা ৮০ ভাগ টিনএজারদের সমস্যা। ব্রণ টিনএজারদের সচরাচর সমস্যা। ছেলেদের ব্রণ তীব্রতার দিক থেকে বেশি হলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে সামাজিক কারণে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি এক প্রকার বিড়ম্বনা।
ত্বকের ভেতর অবস্থিত সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবাম নামক এক প্রকার তৈলাক্ত পদার্থ বের হয় এবং
লোমকূপের গোড়া দিয়ে ত্বকে এসে যায়। সেবাম উৎপাদন বেড়ে গিয়ে এবং এর নির্গমনের পথ বন্ধ হলে ব্রণ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
প্রোপাইনো ব্যাকটেরিয়াম একনে হচ্ছে ব্রণের জীবাণুর নাম। এন্ড্রোজেন হরমোনের কারণে ব্রণ বেশি হয়। এন্ড্রোজেনের প্রভাবে সেবাম নিঃসরণ বেড়ে যায়। টিনএজারদের শরীরে এই হরমোনের কার্যকারিতা বেশি হয়।
যাদের ত্বক তৈলাক্ত ও মাথায় খুশকি আছে তাদের ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যারা ধুলোবালু ও রোদে বেশি বের হয় তাদেরও ব্রণ হতে পারে। কিছু কিছু ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িও ব্রণের তীব্রতা বাড়ায়।
ব্রণ দেখতে বিভিন্ন রকম হতে পারে। গুটিগুটি, দানাদার, লালচে গোটা, পুঁজসহ দানা, বড় চাকা ইত্যাদি হতে পারে। ব্রণের সঠিক চিকিৎসা না হলে বাজে ধরনের কালো দাগ পড়তে পারে। এ ছাড়া মুখে ছোট ছোট ক্ষত বা গর্ত সৃষ্টি হতে পারে। সৌন্দর্যহানি ও মানসিক নানা ভোগান্তির শিকার হয় ব্রণের রোগীরা। ব্রণের হাত থেকে রেহাই পেতে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
ব্রণের চিকিৎসা দীর্ঘস্থায়ী। তাই রোগীর ধৈর্যধারণ প্রয়োজন। আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে ব্রণের চিকিৎসা নিলে ব্রণ ভালো হবে। তবে এরপরে আর কখনও ব্রণ উঠবে এমন বলা যায় না।
মুখ পরিষ্কার রাখা বা ত্বক সঠিক নিয়মে পরিষ্কার করা ব্রণের রোগীদের ক্ষেত্রে খুব প্রয়োজন। সঠিক সাবান দিয়ে দিনে তিনবার মুখ ধুতে হবে। আবার ব্রণের কালো দাগের রয়েছে আলাদা চিকিৎসা। তাই ব্রণের চিকিৎসার
পাশাপাশি আগের ব্রণের কালো দাগ নির্মূলের জন্যও চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। ব্রণ হলে হাত দিয়ে খুঁটবেন না এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করান। মনে রাখবেন, মুখ মনের আয়না।
ত্বক ও যৌনব্যাধি বিশেষজ্ঞ, আলরাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা।
আরও অন্যান্য পদ্ধতি
তাহলে জেনে নেয়া যাক ব্রণ সমস্যা দূর করার অন্যান্য পদ্ধতিগুলোঃ
১.মধুর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বককে ব্রণ মুক্ত করতে
সাহায্য করে।মধু ত্বকের আদ্রর্তা ধরে রাখে এবং ত্বককে অতিরিক্ত তেল থেকে মুক্ত করে।তাই
সকাল বেলায় সম্ভব হলে মধু দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। ভিজা হাতের তালুতে আধা চা চামচ
মধু নিয়ে নিন। এরপর হাতের তালু ঘষে মধু গরম করে নিন এবং পুরো মুখে মধু ম্যাসাজ করে
নিন ২/৩ মিনিট ধরে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে পুরো মুখ ধুয়ে নিন ভালো করে। মনে রাখবেন
যাদের মধুতে এলার্জি আছে তারা এ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন না।
২.প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে জলপাই তেল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন এতে করে ত্বক মসৃণ হয় এবং ধীরে ধীরে
ব্রণের উপদ্রব কমে যায়। দু হাতের তালুতে জলপাই
তেল নিয়ে হাত ঘষে তেল কিছুটা গরম করে নিন। এই তেলটা পুরো মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করতে
হবে নিচের থেকে উপরের দিকে, এভাবে প্রায় ২ মিনিট ধরে মুখ ম্যাসাজ করুন। এভাবে ম্যাসাজ
করলে ত্বক থেকে ময়লা উঠে আসবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে টাওয়েল ভিজিয়ে মুখের অতিরিক্ত
তেল মুছে নিন ভালো করে।
৩.গোলাপ জলের টোনার প্রাকিতিক উপাদানে তৈরী বলে এর কোনো পার্শ
প্রতিক্রিয়া নেই। রোজ ভালো করে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নেয়ার পরে ত্বকে গোলাপ
জলের টোনার ব্যবহার করা ভালো।এতে করে গরম পানি
দিয়ে মুখ ধুয়ার ফলে মুখের রম কূপ যত টুকু খুলে যায় সেটা আবার বন্ধ হয়ে যায় ঠান্ডা গোপাল
জলের তোমার এর জন্য। আপনি দোকান থেকে না কিনে এ রকম টোনার ঘরেও তৈরী করে নিতে পারেন,এর
জন্য যা করতে হবে তা হচ্ছে পানিতে গোলাপ জল মিশিয়ে নিয়ে ফ্রিজে রেখে টোনার করতে পারেন
অথবা টাটকা গোলাপের পাপড়ি নিয়ে পানিতে তে ফুটিয়ে নিন ঠান্ডা করে ice cube ট্রে তে বরফ
বানিয়ে রাখতে পারেন,সকালে বাইরে যাওয়ার আগে অথবা বাসায় ফিরে মুখ ধোয়ার পরে এই বরফ
দিয়ে পুরো মুখ ঘষে নিতে পারেন।যদি আপনার ঠান্ডার সমস্যা থাকে তবে আপনি এ গোলাপ জল
বরফ না করে পানিটি তুলায় ভিজিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন।
৪.ত্বকের মরা চামড়া ও ব্ল্যাক হেডস সরানোর জন্য বেকিং সোডার
স্ক্রাব বাবাঅহার করতে পারেন। মনে রাখবেন এ মরা চামড়া এবং ব্লাক হেডস এর জন্য ব্রণ হয় যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা
হারায়।এই কারণে ত্বককে মাঝে মাঝে স্ক্র্যাবিং করবেন, এক্ষেত্রে আপনি বাজার থেকে কোনো
ভালো ব্রান্ডের স্ক্রাবার কিনতে পারেন অথবা বাসায় তৈরী করে নিতে পারেন বেকিং সোডার
স্ক্র্যাবার।বাসায় তৈরী করার জন্য যা করবেন তা হচ্ছে প্রথমে বেকিং সোডা ও সামান্য পানি
মিশিয়ে নিন ভালো ভাবে। এরপর এই মিশ্রণটি সারা মুখে, ঘাড়ে ও গলায় ভালো করে মেখে নিন
এবং হালকা ভাবে ম্যাসাজ করে নিন। মিনিট খানেক
পরে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই /তিবার এই পদ্ধতি
অনুসরণ করলে ব্রণের উপদ্রব কমে যাবে।
৫. খাবারের বেপারে সচেতন হন। প্রচুর পানি পান করতে হবে ,এর
কোনো বিকল্প নাই। ভাজা পোড়া ,তৈলাক্ত,অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার হচ্ছে এ ব্রণের মূলে।আমে
বলছিনা সব ছেড়ে দিন কিন্তু বলব এ সব খাবার অল্প খান।বেশি করে শাক সব্জি ,শসা ,কাচা
রসুন , টমেটো এ জাতীয় খাবার খান। মোট কথার পানির ভাগ বেশি আছে যে সব খাবারে সেগুলো
খান।
৬.গ্রীন টি পান করুন সারা দিনে ৪/৫ বার ।এ চা শরীরের দুষিত
পদার্থ বের হতে সাহায্য করে এবং ব্রণ হবার জন্য যে ব্যাকটেরিয়া দায়ী তাকে ধ্বংস করতে
কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।
No comments