মেছতার কারণ এবং চিকিৎসা
মেছতা মুখের কালো বা বাদামি রঙের দাগ। এর মেডিকেল নাম মেলাজমা। মেলানোসাইট নামে এক ধরনের কোষ ত্বকের রং সৃষ্টির জন্য দায়ী। এটি কখনও অতিরিক্ত কর্মক্ষম হয়ে অতিরিক্ত রং তৈরি
যেমন-
* এপিডারমাল : এটি সাধারণত চামড়ার উপরের স্তরে থাকে।
* ডারমাল : এটি চামড়ার বেশ গভীরের স্তরে থাকে।
* মিশ্রিত : ত্বকের ওপর ও নিচে সব স্তরেই থাকে মেলানিনের বিস্তার। উডস ল্যম্প নামক এক ধরনের বাতির সাহায্যে আলো ফেলে ত্বকের কোন স্তরে মেছতা হয়েছে তা নির্ণয় করা হয়।
কেন হয়
মেছেতা নারীদের বেশি হয়। গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় দেখা যায়। তাছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, সূর্যরশ্মি, ইস্ট্রোজেন হরমোন গ্রহণ, কিছু ওষুধ যেমন- Psoralen, Arsenic, Antiepileptic,
Phenothiazine ও
কিছু হরমন গ্রন্থির রোগ যেমন- adison's disease, Hyperthroidism মেছতা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সাবধাণতা
* সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলার জন্য সবসময় ছাতা কিংবা সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন।
* ভাজা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
* তাজা শাকসবজি, কাঁচা ও পাকা ফল খেতে চেষ্টা করুন।
* মুখমণ্ডল ছাড়াও কারও যদি শরীরের অন্যান্য অঙ্গে মেছতার প্রকোপ বেশি থাকে তবে তার আঠাল জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা
* ক্লিগমেন ফর্মুলা : এ ফর্মুলায় তিন ধরনের ওষুধের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় যা ব্লিচ হিসেবে কাজ করে এবং মেলানসাইট সৃষ্টিকারী কোষের কার্যকরিতা থামিয়ে রাখে।
* লেজার চিকিৎসা : লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে মেছতা সরানো যায়।
* এমসিডি : ঘূর্ণামাইক্রোমান যন্ত্রের সাহায্যে দাগযুক্ত স্থানের ত্বকের সবচেয়ে উপরের স্তর ব্যথাহীন ও রক্তপাতহীনভাবে তুলে নেয়া হয়। এরপর ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে এটি শুধু এপিডারমাল যা চামড়ার একদম ওপরের স্তরের মেছতার জন্য কার্যকরী।
মধু ও দই-এর মিশ্রণ মেছতার অংশে ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেখক : ত্বক ও যৌনব্যাধি বিশেষজ্ঞ
আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭১৫৬১৬২০০আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মেছতা দূর করার সহজ এবং কার্যকরী ২টি প্যাকের কথা।
লেবুর রস
লেবুর রসে আছে ত্বক ব্লিচিং করার উপাদান যা ত্বকের যে কোনো প্রকার দাগ দূর করে থাকে। এছাড়া লেবুর রস ব্যবহারে ত্বক নরম কোমল হয়ে উঠে।
১। ত্বকে কালো বা খয়েরী দাগে আক্রান্ত জায়গায় লেবুর রস দিয়ে দিন। ৩০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রতিদিন করুন। ২ মাসের মধ্যে আপনি পার্থক্য দেখতে পারবেন। সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারীরা সরাসরি লেবু ব্যবহার না করে সাথে মধু ও গোলাপ জল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
২। আরেকভাবে লেবুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে। লেবুর রসের সাথে পরিমাণ মতো চিনি মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে নিন। এবার পেস্টটি ত্বকে না মিলে যাওয়া পর্যন্ত ঘষুন। বিশেষ করে ত্বকের খয়েরী দাগের জায়গাগুলোতে ভাল করে ম্যাসাজ করে নিন। ৫-১০ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে কয়েকবার করুন। আপনি চাইলে এতে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন।
চন্দন
চন্দনে অ্যান্টি এইজিং এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান আছে যা ত্বকের হাইপারপিগমেনশন কমিয়ে মেছতার দাগ দূর করে থাকে।
১। ২ টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ গ্লিসারিন, এবং লেবুর রস দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন। এবার এই প্যাকটি কালো বা খয়েরী দাগের ওপর লাগান। কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে কয়েকবার এটি করুন।
২। ১ টেবিল চামচ কমলার রস, ১ চা চামচ লেবুর রস, ভিটামিন ই, ২ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। ভাল করে এই প্যাকটি মুখে লাগান। আধা ঘন্টার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করুন। আর দেখুন পার্থক্য।
৩। প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চন্দন পাউডার, অলিভ অয়েল, বাদাম অয়েল মিশিয়ে মুখে ম্যাসাজ করতে পারেন। সারারাত রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে ধুয়ে ফেলুন।
No comments